আউটসোর্সিং

আউটসোর্সিং কি?জেনে নিন আউটসোর্সিংএর যাবতীয় সকল তথ্য।

বর্তমান বিশ্বে আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের একটি বিরাট অংশ আউটসোর্সিং কাজের দিকে ঝুকে পড়ছে কারণ এটিতে কর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। বাড়তি অর্থ উপার্জন হিসেবে অনেকেই কাজের ফাকে ফাকে আউটসোর্সিং কে বেছে নিচ্ছে আবার অনেকেই আউটসোর্সিং কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। আজকের এই প্রবন্ধে, আউটসোর্সিং কি? জেনে নিন আউটসোর্সিংএর যাবতীয় সকল তথ্য।

আউটসোর্সিং কি?

ইন্টারনেটের সাহায্যে নিয়ে, বাসায় বসে অন্যের কাজ করে দেওয়া কিংবা ঘরে বসেই নিজের প্রোডাক্টগুলো বিক্রি করাকে মূলত আউটসোর্সিং বলে।আউটসোর্সিং কথাটির অর্থ ব্যাপক। যেমন, আপনি ঘরে বসেই একজন আমেরিকান ব্যক্তির অফিসের কিছু কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করে দিতে পারেন। এর জন্য আমেরিকান ব্যক্তিটি আপনাকে কিছু অর্থ পরিশোধ করবে যাকে আউটসোর্স ইনকাম বলে।অর্থাৎ আপনার মেইন ইনকামের পাশাপাশি বাইরে থেকেও ইনকাম করছেন।আউটসোর্স ইনকামের এই পদ্ধতিটাকে সাধারণত আউটসোর্সিং বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে আপনি চাইলে নিজের তৈরী বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সেবা অনলাইনে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন যা আউটসোর্সিং এর অন্তর্ভুক্ত।

কীভাবে আউটসোর্সিং শিখবেনঃ

আউটসোর্সিং শেখার প্রধানত তিনটি উপায় আছে। আউটসোর্সিং এর কাজ আপনি চাইলে তিনটি উপায়ের যেকোন একটি উপায় অবলম্বন করে শিখতে পারবেন। তাহলে চলেন জেনে নেওয়া যাক তিনটি উপায়ঃ

  1. আউটসোর্সিং শেখায় এমন কোন প্রতিষ্টান থেকে কোর্স সম্পন্ন করতে পারেন।
  2. আউটসোর্সিং এর কাজ ব্যক্তিগতভাবে কারও কাছ থেকে শিখতে পারেন।
  3. ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে শিখতে পারবেন।

তবে আউটসোর্সিং কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে কাজ শেখার পূর্বে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির সম্পর্কে জেনে নিবেন। 

আউটসোর্সে কি কি কাজ করা যায়ঃ

আপনি চাইলে এক বা একের অধিক আউটসোর্সিং এর কাজ করতে পারবেন। আপনি যত বেশি কাজ করবেন, তত ইনকাম করতে পারবেন। নিচে আউটসোর্সে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো দেওয়া হলঃ

  • অ্যাকাউন্টিং এবং বুককিপিং,
  • সেলস এবং মার্কেটিং,
  • কপিরাইটিং,
  • ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচারিং,
  • এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ব্যাক অফিস এ্যাসিস্টেন্স,
  • কাস্টমার সার্ভিস,
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট,
  • ওয়েবসাইট মেইনটেইনেন্স,
  • গ্রাফিক ডিজাইন,

আউটসোর্সিং এর সুবিধাঃ

আউটসোর্সিং এর সুবিধা ছোট বড় সব কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রয়েছে। একটি কোম্পানির সব সময় সকল সেক্টরে কর্মচারীর প্রয়োজন হয় না। এসব সেক্টরে কাজ করানোর জন্য আউটসোর্সিং এর বিশেষ সুবিধা রয়েছে।চলেন জেনে নেওয়া যাক আউটসোর্সিং এর সুবিধাগুলোঃ

ব্যয় অনেক কম হয়ঃ 

যেকোনো কোম্পানিতে একজন কর্মচারীকে ফুল টাইম কাজ না করিয়ে, তাঁর পরিবর্তে বাহিরের কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে ব্যয় অনেক কম হয়।বর্তমানে অনেক ছোট বড় কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কোম্পানির পছন্দ ও সুবিধা মতো কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছে।

অফ টাইমে কাজ করা যায়ঃ

নিদিষ্ট সময় ছাড়া অফিসের কর্মচারীরা কাজ করে না। তাই আপনি চাইলে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অফিসের কাজ কর্ম গুলো অফিস বন্ধ থাকলেও করে নিতে পারবেন।

দক্ষ কাজের লোকঃ

ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলো থেকে অনলাইনের মাধ্যমে দক্ষ লোক খুঁজে কাজ করে নেওয়া যায়।বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষ লোকরা এসব মার্কেটপ্লেসে যুক্ত থাকে।

কাজ দ্রুত করে নেওয়া যায়ঃ

আপনার যেকেনো কাজ অনেক দ্রুত সময়ে করে নিতে পারবেন, কারণ আউটসোর্সিং এর কাজ চুক্তি ভিত্তিক হয়। কারণ এই কাজ গুলো যেসকল ফ্রিল্যান্সাররা করে তারা খুব দ্রুত কাজ শেষ করে সাবমিট করার চেষ্টা করে।

আউটসোর্সিং এর ওয়েবসাইটঃ

বিভিন্ন কোম্পানি গুলো আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে তাদের কাজগুলো ফ্রিল্যান্সার দিয়ে করিয়ে নেয়। তাছাড়া অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখান থেকে আপনি বিভিন্ন দেশের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে বের করতে পারবেন। নিচে কিছু ওয়বসাইট নাম বল হল, যেখান থেকে আপনি আউটসোর্সিং করার জন্য ভালো মানের অনেক ফ্রিল্যান্সার পেয়ে যাবেন।

  • Freelancer.com
  • Upwork.com
  • Fiverr.com
  • Guru.com

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয়:

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আপনি চাইলে আয় করতে পারবেন। তবে অনেকে আউটসোর্সিং করে ইনকাম করার জন্য সঠিক গাইডলাইন পায় না। তাহলে চলেন জেনে নেওয়া যাক, আউটসোর্সিং করে ইনকাম করার উপায়গুলোঃ

  • আপনাকে এক বা একাধিক যেকোন বিষয়ে কাজ জানতে হবে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে কাজের জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে।
  • আবেদনে সাড়া পেলে আপনাকে  যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে।

আপনি যখন আপনার কাজ সম্পন্ন করবেন তখনই কেবল কাজের বিনিময়ে অর্থ পাবেন। আউটসোর্সিং করে আয় করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ওপরের তিনটি ধাপ মানতে হবে। পাশাপাশি শুধু কাজ জানলেই হবে না, সেইসাথে আবেদন প্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক খুটিনাটি ব্যাপারগুলোও জানতে হবে।

মোবাইলে আউটসোর্সিং:

আপনি চাইলে, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আউটসোর্সিং এর কাজ করতে পারবেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা ওয়েব ডিজাইনের মত কাজগুলো আপনি মোবাইল ফোন দিয়ে করতে পারবেন না। যেমন  ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মত ছোটকাটো আউটসোর্সিং এর  কাজগুলো মোবাইল ফোন দিয়ে করা যায়। তবে আপনি যদি একজন সফল ফ্রীল্যান্সার চান, তাহলে  আপনার অবশ্যই একটি কম্পিউটার থাকতে হবে। সুতরাং, একটি কম্পিউটার কিনে ফেলুন যদি আপনি আউটসোর্সিং এর কাজ ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান।

আউটসোর্সিং কেন করা হয়?

মনে করুন,আপনার একটি কোম্পানি আছে সেখানে নিয়মিত ৫০ জন কর্মচারী কাজ করেন। এদের মধ্যে সফটওয়্যারের কাজ করান ২০ জনকে দিয়ে। ভিডিও এডিটিং এর কাজ করান ২০ জনকে দিয়ে। কোম্পানির অন্যান্য কাজ বাকি ১০ জন দেখাশুনো করেন। অনেক সময় আপনার কোম্পানির জন্য মাসে ৫/৬ লোগো ডিজাইন করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্ত আপনার কোম্পানিতে যে কর্মচারী রয়েছে লোগো ডিজাইনের কাজ করানো তাদের দ্বারা সম্ভব না।

এক্ষেত্রে একজন লোগো ডিজাইনার যদি আপনি কোম্পানিতে স্থানীয় ভাবে নিয়োগ দিতে চান, তাহালে প্রত্যেক মাসে আপনাকে অনেক টাকা বেতন দিতে হবে। এজন্য খরচের কথা চিন্তা করে কোম্পানি বাহিরের সোর্স থেকে একজন লোগো ডিজাইনারকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এতে বাহির হতে আপনি কোন কর্মচারী রেখে কাজ করানোর ফলে আপনার খরচ অনেক কম হবে। মূলত আউটসোর্সিং করা হয়, কোনো কোম্পানির খরচ কমানোর জন্য বা অল্প সময়ে ভিতরে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশে আউটসোর্সিং অবস্থানঃ 

বর্তমানে বাংলাদেশে আউটসোর্সিং এর সম্ভাবনা প্রচুর।বিশ্বে শীর্ষে থাকা আউটসোর্সিং দেশগুলোর মধ্যে উপরের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান।হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণী প্রতি বছর আউটসোর্সিং করে তাদের বেকারত্ব দূর করছে। একদিকে যেমন বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর হচ্ছে, তেমনি দেশের একটি বিরাট অংশ রেমিট্যান্স বা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে। আগে প্রবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বর্তমানে সেটি অনেকটাই কমে গেছে। অন্যান্য দেশে আউটসোর্সিং এর উপর ভ্যাট বা কর আরোপ করা হলেও বাংলাদেশে সেটি করা হয়নি। যার ফলে সহজেই বিনা ভ্যাটে একজন ফ্রীল্যান্সার কাজ (যিনি আউটসোর্সিং করেন) করতে পারেন। তবে বাংলাদেশে পেপাল সুবিধা না থাকায় একজন ফ্রীল্যান্সারের পেমেন্ট পেতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়।এখন আগের তুলনায় ব্যাংকিং পদ্ধতি উন্নত হওয়ায়, এখন ব্যাংকের মাধ্যমেই  ফ্রীল্যান্সাররা পেমেন্ট পেয়ে থাকেন, কারণ  ব্যাংকিং পদ্ধতি বর্তমানে উন্নত হয়েছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *