কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার সমস্ত নিয়মাবলী

কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার সমস্ত নিয়মাবলী জেনে নিন !

বর্তমান সময়ে দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে কাপড়ের চাহিদাও বাড়ছে বর্তমান বাজারে। সবাই চাইছে সবার থেকে আলাদা নতুন জামা কাপড় কিনতে। এই জন্যই বর্তমান সময়ে কাপড়ের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। আপনি চাইলেও অল্প সময়ের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করে লাভবান হতে পারবেন। এজন্য সর্বপ্রথম আপনাকে একটি নির্দিষ্ট বিভাগ নির্বাচন করতে হবে, অর্থাৎ আপনি কোন ধরনের পোশাক বিক্রি করতে চান।

যেমন ছেলেদের টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, মেয়েদের কুর্তি, শাড়ি, পাইজামা, এর সাথে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক ইত্যাদি বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবের সময় নানাধরনের ডিজাইনের পোশাক এবং শীতের সময় শীতের পোশাকও বিক্রি করতে পারেন। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে আপনি ব্যবসা করে লাভবান হতে পারবেন এবং বেকারত্ব সমস্যাও দূর হবে। আজকের এই প্রবন্ধে, কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার সমস্ত নিয়মাবলী সম্পর্কে বলবো। তাহলে চলেন শুরু করা যাক-

কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার নিয়মাবলীঃ

বর্তমানে সময়ে কাপড়ের বা ছিট কাপড়ের ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। আপনি চাইলে তিনটি উপায়ে তিনটি উপায়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। চলেন উপায়গুলো জেনে নিই:

১.নিজে কাপড় উৎপাদন করে ব্যবসা করতে পারবেন।

২.নিজে কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।

৩.কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা করতে পারবেন।

১)নিজে কাপড় উৎপাদন করে ব্যবসাঃ

আপনি নিজেই কাপড় উৎপাদন করে, বৃহৎ পরিসরে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনি বাড়িতে বসেই কাপড় উৎপাদন শুরু করে দিতে পারেন। তাছাড়া যারা টেক্সটাইল শিল্পের সাথে আগে থেকেই জড়িত আপনি তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েও শিখতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে নরসিংদী জেলা কাপড় উৎপাদনের জন্য সবথেকে বিখ্যাত একটি জেলা।

২)কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসাঃ

সাধারণত আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কাপড়ের ব্যবসার নিয়মকানুন জানেন না কিন্তু কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে চান। তাঁরা চাইলে কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। কাপড়ের দোকান খুবই সহজতর একটি ব্যবসা পদ্ধতি। আপনি চাইলে বড় বা ছোট পরিসরে কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তাছাড়া আপনি কাপড়ের দোকানের পাশাপাশি টেইলার্সের ব্যবসাও করতে পারেন। যা বর্তমানে ভালো একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে অবশ্যই এমন জায়গায় কাপড়ের দোকান দিতে হবে যেখানে মহিলাদের যাওয়া-আসা খুবই বেশি এবং সেসব স্থানে তারা যেন স্বাচ্ছন্দে আসতে পারে। কারণ মহিলারাই হবে আপনার দোকানের জন্য বেশি কাস্টমার। তাই আপনি চাইলে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করে।

৩)কাপড়ের পাইকারি ব্যবসাঃ

আপনি চাইলে কাপড়ের পাইকারী ব্যবসাও শুরু করতে পারেন। মূলত কাপড়ের পাইকারী ব্যবসা বলতে উৎপাদনকারী কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে নিয়ে এসে,বিভিন্ন ধরনের কাপড় খুচরা বা পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাঝখানে সাপ্লায়ার হিসেবে কাজ করে। যদি ব্যবসাটি লাভজনক হলেও এই ব্যবসায়ে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। কারণ আপনি যখন পাইকারিভাবে অনেক কাপড় কিনে আনবেন,তখন বাকিতে অনেক দোকানদারকে কাপড় দিতে হবে। যার ফলে সম্পূর্ণ টাকা আপনি একসাথে কোন সময় হাতে পাবেন না। যার ফলে অনেক ব্যবসায়ীকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

কাপড়ের ধরন নির্বাচন করাঃ

আপনি যদি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে যাচাই বা গবেষণা করতে হবে। কোন ধরনের কাপড়ের চাহিদা মার্কেটে বেশি রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ কাপড়ের বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন:

  • থ্রি পিস
  • প্যান্ট
  • শার্ট
  • টি-শার্ট
  • বোরকা
  • লুঙ্গি
  • ছাপার কাপড়
  • টাঙ্গাইল কাপড়
  • গজ কাপড়
  • শাড়ি
  • বাচ্চাদের কাপড়
  • ফোরাক
  • বাচ্চাদের কাপড়

এরকম আরো নানান ধরনের কাপড় মার্কেট রয়েছে। কিন্তু এসব কাপড়ের বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তাই একসাথে সব ধরনের কাপড় নিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না। এজন্য আপনাকে প্রথমে, কোন ধরনের কাপড়ের চাহিদা মার্কেটে বেশি তা নির্বাচন করতে হবে। মানুষ বেশি বেশি ক্রয় করে এমন কাপড়। তবুও কিছু পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু আপনি যখন গবেষণা চালাবেন, তখন সবকিছু বুঝতে পারবেন।

কাপড়ের দোকানের নামের তালিকাঃ

ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে একটি ব্যবসার নাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমন একটা নাম নির্বাচন করবেন যেন নামটি ইউনিক হয় এবং গ্রাহকরা খুব সহজেই মনে রাখতে পারবে। নিচে কয়েকটি নাম দেওয়া হলঃ

  • চাঁদনী ফ্যাশন হাউজ,
  • রুপসী বস্ত্র বিতান,
  • ইমরান ফেব্রিক হাউজ 
  • পার্থ বস্ত্রমেলা,
  • তানিয়া বস্ত্রশাল,
  • রাজেশ গার্মেন্টস,

অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার নিয়মাবলীঃ

ব্যাবসায়িক পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক রয়েছে, যেমন সঞ্চয়, কর্মী, বিক্রয় এবং প্রেরণ। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ খরচ, সংশ্লিষ্ট তহবিল এবং তার সঙ্গে পোশাকের ডেলিভারি খরচ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আপনাকে আগে ভাবতে হবে আপনি খুচরা বিক্রেতা হতে চান না পাইকারি। সমস্ত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করার আগে আপনাকে মূলধনের ওপর বিবেচনা করতে হবে। আপনি প্রথমে একটি ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারেন এরপর আপনার ব্যবসার উন্নতির ওপর নির্ভর করে সেটিকে বাড়াতে পারেন।

পোশাকের উৎসঃ

আপনাকে প্রথমে ব্যবসা শুরু করার আগে দেখতে হবে যে, কোথা থেকে পোশাক কিনলে ভালো কোয়ালিটির পোশাক আপনি খুব কম দামে পাবেন। কারণ গ্রাহকদের কাছে যদি অনলাইন পোশাকের কোয়ালিটি একবার খারাপ লাগে, তাহলে আর কখনই তারা আপনার কাছ থেকে পোশাক কিনবে না। এজন্য গ্রাহকদের ভালো মানের পোশাক সরবরাহ করার চেষ্টা করুন।

পোশাকের ব্র্যান্ডের নাম ঠিক করুনঃ

আপনার পোশাকের জন্য আপনি একটি ব্র্যান্ড নির্ধারণ করুন এবং সেই হিসেবে একটি নাম রাখুন। গ্রাহকরা কোথা থেকে পোশাক কিনছে সেটা জানা তাদের কাছে সেটা জানা খুব দরকার। একবার যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম ছড়িয়ে পড়ে, আপনার ব্যবসায় উন্নতি হবে। তাছাড়া আপনি আপনার ব্র্যান্ডের নামটি রেজিষ্ট্রেশন করুন, যাতে অন্য কেউ আপনার ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার না করতে পারে।

মার্কেটিং করার উপায়ঃ

একটি নতুন স্টোর বা দোকান গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বেশ সময় লেগে যায়, এজন্য আপনাকে মার্কেটিং সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখতে হবে। আপনি গুগলে এডভেরাটাইজ করে, সাথে ফেসবুক বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এডভেরাটাইজ করতে পারেন।

ক্যাটালগ তৈরি করুনঃ

আপনার পোশাক বিভিন্ন ক্যাটালগে অন্তর্ভুক্ত করুন। এর ফলে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে এবং তাঁরা খুব দ্রুত পোশাক কিনতে পারবে।

পোশাকের রং এবং সাইজ নির্ধারণ করুনঃ

আপনাকে অবশ্যই একই রকম পোশাকের বিভিন্ন ধরনের সাইজ এবং রং রাখতে হবে। কারণ সবার পছন্দ এক নয়। এজন্য আপনাকে সবার কথা ভেবে কাজ করতে হবে এবং আপনার স্টোরে গ্রাহকরা যাতে সব ধরনের পোশাক পেয়ে যায়।

অনলাইন প্লাটফর্ম কোনটি ব্যবহার করবেন সেটি নির্বাচন করুনঃ

কোন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে আপনি আপনার ব্যবসাটি শুরু করবেন সর্বপ্রথম সেটি নির্বাচন করুন। আপনি Shopify, Flipkart, Amazon, Ali-Baba, Daraz ইত্যাদি প্লাটফর্ম বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন স্টোর খুলতে পারেন। বর্তমান বিশ্বের অনেক লোক Amazon এ তাদের পোশাক বা পণ্য বিক্রি করে থাকে। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে শুধু Amazon কে আপনার পণ্য পাঠিয়ে দিতে হবে এবং বাকি সমস্ত কাজ যেমন, গ্রাহক থেকে অর্থ সংগ্রহ ও ডেলিভারি সমস্ত কাজ তারাই করে দিবে আপনার জন্য।

অনলাইন ওয়েবসাইট বানানোর উপায়ঃ

আপনি নিজে যদি ওয়েবসাইট বানাতে পারেন  তাহলে সেটা আপনার জন্য খুবই ভালো। আর যদি না পারেন তাহলে আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন। আপনি Fiverr, Upwork, Freelancer অনেক লোক পাবেন, যারা আপনাকে কম দামে একটি ভালো ই-কমার্স স্টোর খুলে দিবে।

পরিশেষে, অবশ্যই আপনাকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, সেটি হচ্ছে কাপড় বা যেকোনো পণ্য উৎপাদনকারী ব্যবসা হচ্ছে একটি স্বাধীন ব্যবসা। সমস্ত পরিকল্পনা করে নিয়েই তারপর আপনাকে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে হবে, নাহলে ব্যবসা থেকে লাভবান হতে পারবেন না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *