প্রেগন্যান্সি টেস্ট

প্রেগন্যান্সি টেস্ট খুব সহজেই ঘরে বসে করুন!

আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা, তা জানার জন্য বর্তমানে সময়ে আপনাকে আর কষ্ট করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। বাজার থেকে একটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনে এনে তাঁর সাহায্যেই সহজেই জানতে পারবেন। বর্তমানে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট অনেকেই ব্যবহার করেন, কিন্তু সমস্যা হল তাঁরা আদৌ বুঝে উঠতে পারে না যে গর্ভবতী কিনা। এর প্রধান কারণ হল, অনেকেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সঠিক ব্যবহার জানেন না। কিন্তু আগেকার দিনে, বাড়ির বয়স্ক মহিলারা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে কোন মহিলা গর্ভবতী কিনা টেস্ট না করেই বলে দিতে পারতেন। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না৷ আর ঠিক সেকারণেই আমরা আজ আলোচনা করব যে ঠিক কিভাবে আর কখন আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সাহায্যে পরীক্ষা করলে একদম সঠিক ফলাফল জানতে পারবেন।

কতদিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয় ?

বিভিন্ন কারণে  আপনার পিরিয়ড মিস হতে পারে, তবে বিয়ের পর আপনি যদি সেক্স লাইফে বেশি এ্যাক্টিভ থাকেন। যদি সেসময় আপনার পিরিয়ড মিস হয় তাহলে অবশ্যই এক সপ্তাহ পরে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাবেন। কিন্তু পিরিয়ড মিস হওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে টেস্ট কিট কিনে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই।। এক সপ্তাহ পর আপনার যদি পিরিয়ড না হয়, সেসময় অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। কারণ, আপনি যদি গর্ভবতী হন, তাহলে আপনার প্রস্রাবে HCG হরমোন তৈরি হবে। আর মোটামুটি এটি তৈরি হতে সপ্তাহখানেক লাগে।

প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম

আপনি চাইলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগনেন্সি এড়াতে পারবেন। এজন্য প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে।

সাধারণত দুইভাবে  করা যায়,

১. বাজারে কিনতে পাওয়া প্রেগনেন্সি কিটের মাধ্যমে।

২. ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে।

আপনি চাইলে ঘরে বসে সহজেই প্রেগনেন্সি কিটের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে পারবেন। এই প্রেগনেন্সি কিট যেকোন ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায়। প্রেগনেন্সি পরিক্ষা করার আগে অবশ্যই কিটে দেওয়া ব্যবহার নির্দেশনাগুলো ভালোভাবে পড়ে নিন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রেগনেন্সি কিটে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া থাকতে পারে। যেমন, একটি পরীক্ষায় আপনাকে পরীক্ষার স্ট্রিপে ইউরিন দিতে বলা হতে পারে। আবার অন্যটায়, আপনাকে পরীক্ষার কিটটিতে ড্রপার দ্বারা প্রদত্ত জায়গায় কয়েক ফোঁটা ইউরিনের নমুনা ফেলতে হতে পারে। প্রেগনেন্সি কিটে যদি গোলাপি এবং নীল রঙ আসে, তাহলে প্রদত্ত কিটের  নির্দেশনার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন পজিটিভ বা নেগেটিভ। এবং কিছু কিছু ডিজিটাল কিটে একইভাবে পজিটিভ বা নেগেটিভ লেখা দেখা দেয়। অতএব উক্ত পদ্ধতিটি সহজ এবং নিরাপদ। 

ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রেগনেন্সি টেস্ট : 

কোনোরকম কিট ছাড়াই ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। চলুন জেনে নিই সে সকল পদ্ধতিগুলো:

১. চিনি:  এটি বেশ পুরাতন প্রচলিত একটি পদ্ধতি। একটি পাত্রে এক চা চামচ চিনি নিয়ে  সকালের প্রথম ইউরিনের সাথে মেশান। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। যদি চিনি মিশে যায় তবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী নন। আর যদি ইউরিন জমাট বেধে যায় তাহলে আপনি গর্ভবতী অর্থাৎ টেস্ট পজিটিভ। 

২. টুথপেষ্ট: আপনার সকালের ইউরিনের সাথে অল্প কিছু টুথপেষ্ট মেশান। যদি ইউরিন নীল রঙ ধারণ করে এবং ফেনা হয় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাদা টুথপেষ্ট ব্যবহার করতে হবে। 

৩. সাবান পানি: সকালের ইউরিনের সাথে সাবান পানি মিশিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।আপনি যদি গর্ভবতী হন তাহলে মিশ্রনটিতে বুদবুদ দেখা দিবে। তবে এই পরিক্ষার ফলাফল অনেকসময় আশানুরূপ দেয় না।

৪. ভিনেগার: সকালের প্রথম ইউরিন ভিনেগারে  মিশিয়ে অপেক্ষা করুন। ভিনেগারের রঙ পরিবর্তন হলে আপনি গর্ভবতী। আর যদি রং পরিবর্তন না হয়, তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ। 

৫. বেকিং সোডা:  এক টেবিল চামচ ইউরিনের সাথে দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা মেশাতে হবে। আপনার রেজাল্ট পজিটিভ হবে যদি মিশ্রণে বুদবুদ হয়।

প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর নাম 

আমাদের মাঝে অনেকেই যারা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটের নাম জানেন না। তবে আমাদের দেশে খুব পরিচিত কয়েকটি টেস্ট কিট রয়েছে৷ চলেন জেনে নিই টেস্ট কিট গুলো নাম:

  1. Get Sure ( HCG Urine Pregnancy Test Cassettes)
  2. Good News ( Digital Cassette) 
  3. MAM CHECK
  4. i-can ( One Step Pregnancy Test Kit)

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট এর দাম:

উল্লেখিত প্রথম ২ টি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের দাম এক পিস ২০-৫০ টাকা। ৩য় টার দাম ৮০-১০০ টাকা এবং ৪র্থটার দাম ১০০ টাকার উপরে লাগবে। তবে অঞ্চল ভেদে দামের তারতম্য থাকতে পারে।

প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না?

বাড়িতে বসে প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে টেস্ট করার পর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে কিন্তু  মাসিক হচ্ছে না। তাহলে আপনি আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে পুনরায় পরীক্ষা করুন। যদি এবারও রেজাল্ট নেগেটিভ আসে তাহলে ডাক্তারের  সঙ্গে পরামর্শ করুন। প্রেগন্যান্সি ছাড়া আরো বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

পরীক্ষার যত সত্য-মিথ্যাঃ

প্রেগন্যান্সি কিট প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্ভুল তথ্য দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি ফলস পজিটিভ হতে পারে। মানে আপনি অন্তঃসত্ত্বা নন, তবু পজিটিভ হতে পারে। গর্ভপাতের পর বা সন্তান জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট করলে পজিটিভ হতে পারে। কারণ হরমোন তখনো থেকে যায়। তবে কিটের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হয়ে গেলে বা কিট ব্যবহার অযোগ্য হলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে।

রিপোর্ট ফলস কিন্তু নেগেটিভ হয় কেন?

আবার অনেক সময়  উল্টোটাও হতে পারে। আপনি অন্তঃসত্ত্বা কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ দেখাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি আপনি টেস্ট করে ফেলেন অর্থাৎ মাসিকের তারিখের এক সপ্তাহ পার না হতেই। যাঁরা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না বা টেস্টের আগে প্রচুর পানি পান করলে প্রস্রাবে হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এজন্য  নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।

তাই আপনি সহজেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে পারবেন উপরিউক্ত পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে। তবে আপনি চাইলে  ডাক্তারের কাছে গিয়েও প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *