মার্ক জাকারবার্গ

মার্ক জাকারবার্গ শিক্ষা, ধর্ম, স্ত্রী, এবং কোন দেশের নাগরিক

মার্ক জাকারবার্গ, (জন্ম: ১৪ মে, ১৯৮৪) একজন আমেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপার। তার পুরো নাম মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ, যার আসল পরিচিতি হলো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তিনি ফেইসবুকের চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নিয়ন্ত্রক অংশীদার। তিনি সৌর পাল মহাকাশযান উন্নয়ন প্রকল্প ব্রেকথ্রু স্টারশট এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ডের অন্যতম সদস্য হিসাবে কাজ করছেন।

জাকারবার্গের জন্ম নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইনসে। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন এবং সেখানেই তার সহপাঠী এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, এন্ড্রু ম্যাককলাম, ডাস্টিন মস্কোভিটজ এবং ক্রিস হিউজের সাথে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেইসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে শুধু কলেজ ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চালু করা হলেও এটি খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ২০১২ সাল নাগাদ ১০০ কোটি ব্যবহারকারীতে পৌঁছে। ২০০৭ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ আত্মকৃত বিলিয়নেয়ার হন। ২০২০ সালের নভেম্বর নাগাদ জাকারবার্গের নিট সম্পদ প্রায় ৯.৭ বিলিয়ন ডলার, যা তাকে বিশ্বের ৪র্থ ধনী ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে। ফোর্বসের সবচেয়ে ধনী ২০ ব্যক্তিদের তালিকায় ৪০ বছরের কম বয়সী তিনিই একমাত্র ব্যক্তি।

২০১০ সাল থেকে টাইম ম্যাগাজিন বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব পুরষ্কারের অংশ হিসাবে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে জাকারবার্গের নাম ঘোষণা করেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাকারবার্গ ফোর্বসের প্রকাশিত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের তালিকায় দশম স্থানে ছিলেন।

১৯৮৪ সালের ১৪ মে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন এলাকাতে মনোচিকিৎসক ক্যারেন ও দন্তচিকিত্‍সক জাকারবার্গের ঘরে জন্ম নেন মার্ক জাকারবার্গ। জাকারবার্গের তিন বোন রয়েছে, র‍্যান্ডি, ডোনা এবং এরিএল। জাকারবার্গ একজন ইহুদী হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক হিসেবেই বর্ণনা করেন।

আর্ডসেলি হাই স্কুলে জাকারবার্গ গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি ফিলিপস এক্সটার একাডেমীতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি বিজ্ঞান এবং ক্লাসিক্যাল শিক্ষায় পুরস্কৃত হন। তিনি অসিক্রীড়া তারকা ছিলেন এবং অসিক্রীড়া দলের অধিনায়ক ছিলেন। কলেজে তিনি মহাকাব্যিক কবিতার লাইন থেকে আবৃত্তি করার জন্য পরিচিত ছিলেন। ২০০৪ সালে হার্ভার্ডে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট দ্য ফেইসবুক ডট কম।২০১০ সালে ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক তাদের প্রচ্ছদে ঠাঁই করে নেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিন ঐ বছর তাকে পারসন অব দ্য ইয়ার হিসেবে মনোনীত করেছিল।

ফেসবুক তো আমরা সবাই কমবেশি ব্যবহার করি। দিনে অন্তত একবার ফেসবুকের ওয়াল আর নোটিফিকেশন চেক না করলে আমাদের অনেকেরই যেন পেটের খাবার হজম হওয়া সহ নানান ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। মার্ক জুকারবার্গ এর হাতে গড়ে উঠা এই সামাজিক গণমাধ্যম পুরো বিশ্বতেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে।

বর্তমানে আমাদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনের অনেক বড় একটি স্থান দখল করে আছে এই শীর্ষ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটি। পুরাতন বন্ধুদের খোঁজখবর করার পাশাপাশি নতুন বন্ধুর খোঁজেও অনেকে ফেসবুক ব্যবহার করেন। অনেকেই ফেসবুককে তাঁদের পেশার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করেছেন। বিশ্বের সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য ফেসবুকের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল যা ফেসবুককে শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মার্কেটিং প্লাটফর্মে পরিনত করেছে।

আজকের বিশ্বের যে কোনও ওয়েবসাইট র‌্যাঙ্কিয়ে ফেসবুক এক অথবা দুই নম্বরে আছে। এত অল্প সময়ে কোনও ওয়েব সার্ভিস এত সাফল্য অর্জন করার নজির খুব বেশি নেই। আর ফেসবুকের এই অবিশ্বাস্য উত্থানের পেছনে যে মানুষটির সবথেকে বড় অবদান তাঁকে আমরা মোটামুটি সবাই এক নামে চিনি। হ্যাঁ – ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বার্হী কর্মকর্তা মার্ক জুকারবার্গের কথাই বলা হচ্ছে। আমরা সবাই কমবেশি এটুকু তথ্য জানি যে জুকারবার্গ ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু কিভাবে তিনি এই অবিশ্বাস্য সফলতার দেখা পেলেন? কিভাবে একজন মেধাবী ছাত্র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গা ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট, নিজের মেধা আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে আজকের পর্যায়ে পৌঁছালেন? চলুন আজ আমরা জেনে নিই মার্ক জুকারবার্গের সাফল্যযাত্রার খুঁটিনাটি।

আগের অংশে বলা হয়েছিল যে ২০১২ এর ১৯শে মে জুকারবার্গের জীবনধারায় দু’টি বড় পরিবর্তন এসেছিল। প্রথমটি ছিল শেয়ার বাজারে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী হিসেবে ফেসবুকের পদার্পণ। দ্বিতীয়টি চাক্ষুষ করতে ক্যালিফোর্নিয়ার পাওলো আলটোতে অবস্থিত মার্ক জুকারবার্গ এর বাড়িতে সেদিন ১০০ অতিথির সমাগম হয়েছিল। অতিথিরা ভেবেছিলেন যে তাঁরা মার্কের দীর্ঘদিনের প্রেমিকা প্রিসিলা চ্যান এর মেডিক্যাল কলেজ গ্রাজুয়েশন উদযাপন করতে এসেছেন। কিন্তু তাঁরা অবাক হয়ে দেখলেন তাঁদের সামনে এই যুগল যাজকের সামনে তাঁদের বিবাহ-প্রতিশ্রুতি বিনিময় করছেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে মার্ক ও প্রিসিলা তাঁদের প্রথম কন্যাসন্তান ম্যাক্সকে পৃথিবীর বুকে স্বাগত জানান। ম্যাক্সের জন্মের পর বাবা মার্ক জুকারবার্গ পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য দুই মাসের পিতৃত্বের ছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এই সময়ে তিনি ও প্রিসিলা তাঁদের কন্যার উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন এই মর্মে যে তাঁরা তাঁদের অধিকারে থাকা ফেসবুকের শেয়ারের ৯৯ শতাংশ দাতব্য কাজে দান করে যাবেন। চিঠিতে তাঁরা লেখেন “আমরা আমাদের ক্ষূদ্র সামর্থ দিয়ে পৃথিবীকে সব শিশুর জন্য আরেকটু সুন্দর স্থান বানানোর ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা আমাদের ফেসবুক শেয়ারের ৯৯ শতাংশ – যা বর্তমানে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার – অন্য অনেকে যারা পরবর্তী প্রজন্মের কল্যানে পৃথিবীকে আরও সুন্দর করার প্রয়াসে নেমেছেন তাঁদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে দান করে যাব।”

পরবর্তী বছরের সেপ্টেম্বরে এই দম্পতি ঘোষণা দেন যে “চ্যান-জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ” যেই সংস্থায় তাঁরা তাঁদের ফেসবুক শেয়ার দান করেছেন, তারা আমাদের সন্তানদের জীবনকালে যত প্রকারে রোগ হতে পারে তার সবগুলোর প্রতিকার আবিষ্কারের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অন্তত তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল বরাদ্দ করবে।

রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত নিউরো সাইন্টিস্ট ড. কোরি বার্গম্যানকে সি জেড আই এর প্রেসিডেন্ট অব সাইন্স হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এরপর তারা চ্যান-জুকারবার্গ বায়োহাব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই বায়োহাবটি সান ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক একটি স্বায়ত্বশাসিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র যেখানে প্রকৌশলী, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, পদার্থবিদ, প্রাণরসায়নবিদ – ইত্যাদি সব ধরনের বৈজ্ঞানিকদের একটি মিলনমেলা ঘটবে এবং তাঁরা একসাথে কাজ করবেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সানফ্রান্সিস্কো বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বারকেলি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একসাথে কাজ করার চুক্তিতে আবদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রটির জন্য দশ বছর ধরে প্রদেয় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রাথমিক তহবিল বরাদ্দ করা হয়।

২০১৭ সালের মার্চে জুকারবার্গ দম্পতি ঘোষণা দেন তাঁরা তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান আশা করছেন। সেই বছরের ২৮শে আগ্স্ট তাঁদের দ্বিতীয় কন্যা অগাস্ট পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে। অগাস্টের জন্মের পর জুকারবার্গ ফেসবুকে লেখেন যে তাঁর প্রথম চাওয়া ছিল শিশুটি যেন সুস্থ হয়, এবং দ্বিতীয় চাওয়া ছিল শিশুটি যেন মেয়ে হয়। একটি বোন পাওয়ার থেকে ম্যাক্সের জন্য ভাল আর কিছু হতে পারত না।
মার্ক জুকারবার্গ এবং ফেসবুক এখনও তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে। মার্কের মত এত কম বয়সে শুধুমাত্র নিজের বুদ্ধি, প্রতিভা আর কর্ম দিয়ে এতবড় সাফল্যের দেখা পৃথিবীতে খুব কম মানুষই পেয়েছেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *