হেঁচকি ওঠা বন্ধ করার সহজ উপায়

১০টি হেঁচকি ওঠা বন্ধ করার সহজ উপায়

আমাদের সকলে কমবেশি হেঁচকির সঙ্গে পরিচিত। এটা খুবই কষ্টকর ও একটি বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা।বেশির ভাগ সময় হেঁচকি ওঠে কিছুক্ষণ পর এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু হেঁচকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে হেঁচকি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।তাই আজকের এই প্রবন্ধে, ১০টি হেঁচকি ওঠা বন্ধ করার সহজ উপায় আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।চলেন শুরু যাক-

হেঁচকি ওঠার কারণঃ

হেঁচকি ওঠা বেশ কিছু অসাবধানতা রয়েছে।চলেন জেনে নেওয়া যাক কারণগুলো:

১।অনেক খাবার একসঙ্গে খেলে,

২।অ্যালকোহল বেশি পরিমাণে পান করলে,

৩।প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শ্বাস নিলে,

৪।হঠাৎ করে পেটের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে, যেমনঃ আপনি গরম পানীয় পান করার পরপরই আবার ঠাণ্ডা পানীয় পান করলেন এতে সমস্যা সৃষ্টি হয়,

৫।দীর্ঘ সময় ধরে পানি পান না করে,  হঠাৎ দ্রুত পানি পান করলে,

৬।খাবার সময় কথা বলা বা অন্যদিকে মনোযোগ দিলে,

৭।ধূমপান করলে,

৮।অনেক সময় মানসিক চাপ বা উত্তেজনার জন্য হেঁচকি হতে পারে,

হেঁচকি ওঠা বন্ধ করার উপায়ঃ

ঘরোয়া উপায়ে বেশিরভাগ সময়  করে হেঁচকি বন্ধ করা যায়। চলেন জেনে নেওয়া যাক উপায়গুলোঃ

 ১।বড় করে  শ্বাস নিয়ে যতক্ষণ সম্ভব শ্বাসটি চেপে ধরে রাখুন। সেই সাথে নাকও চেপে রাখুন

২।এক চামচ চিনি খেলে হেঁচকি বন্ধে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৩। একটি কাগজের ব্যাগে মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কাগজের ব্যাগ দিয়ে পুরো মাথা দিয়ে ঢেকে ফেলা যাবে না।

৪।হেঁচকি ওঠার সাথে সাথে কমানো সম্ভব যদি  কাশি, ঢেকুর বা হাঁচি যে কোন একটি দেওয়া যায়। কারণ,  এতে বুক ও পেটের মাঝে যে পর্দা থাকে তা সংকুচিত হয়ে হেঁচকি ওঠা বন্ধ  করতে সাহায্য করে।

৫।ভালোভাবে মুখের উপরিভাগে মালিশ করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি তুলা দিয়ে খুব সাবধানে ম্যাসাজ করতে হবে। যদি সম্ভব হয় গলার পিছনে মালিশ করতে পারেন।

৬।বুকে মৃদু চাপ দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।  এছাড়া বুকের কাছাকাছি কয়েক মিনিট হাঁটু এনে অপেক্ষা করলেও  উপকার পাওয়া যায়। 

৭।পানি পান করুন বেশি করে। বিশেষ করে ঠান্ডা পানি খেলে দ্রুত উপকার হেঁচকির সমস্যায় পাওয়া যায়।

৮।জিভে এক টুকরো পাতি লেবু কিছুক্ষণ রেখে চুষুন। হেঁচকি বন্ধ করতে এটি খুবই কার্যকারী সামান্য আদা কুচি করে লেবুর রসের সঙ্গে একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে হেঁচকি বন্ধ হয়।

৯।হেঁচকি ওঠা বন্ধ করা যায় কোমল পানীয় পান করে । তবে, সোডা-পানি পান করা থেকে বিরত থাকবেন।  কারণ এতে হেঁচকি ওঠার সম্ভবনা বেড়ে যায়।    

১০।কোন ভাবেই আপনার হেঁচকি কমছে না, এজন্য আপনাকে একটি অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট খেতে হবে। কারন এতে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম আছে,  যা আপনার নার্ভগুলোকে শান্ত করে। ফলে একটা ট্যাবলেট খেলেই আপনা আপনিই হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে  কোন ভাবেই যদি হেঁচকি ওঠা বন্ধ না হয়। তাহলে অবশই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুর কেন হেঁচকি উঠে?

সাধারণত শিশুর হেঁচকি ওঠার কারণ হচ্ছে, ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদায় অস্বস্তিকর অবস্থা যখন সৃষ্টি হয়।ফুসফুসের নিচে ডায়াফ্রাম থাকে।কোন কারণে শিশুর খাবার খেতে খেতে যদি ডায়াফ্রামের উপর চাপ পড়ে ঠিক তখনই শিশুর হেঁচকি উঠা শুরু হয়। 

শিশুর হেঁচকি ওঠা বন্ধ করার উপায়ঃ

১।শিশুর হেঁচকি ওঠার সাথে সাথে শিশুকে খানিকটা বুকের দুধ খাওয়ান। কারণ তরল দুধ শিশুর খাবারের পথ নরম ও মসৃণ করবে। এতে ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

২।আপনার শিশুকে সাধারণ তরল পানি খেতে দিন,  যদি শিশুর বয়স ১ বা তার থেকে বেশি হয়। এতে ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে গ্লাসে করে শিশুকে পানি না খাওয়ানোই ভাল। নিপলযুক্ত ওয়াটার বটল এই বয়সের শিশুর জন্য ব্যবহার করা উত্তম।

৩।আপনার শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয় তাকে অল্প করে চিনি খাওয়াতে পারেন যদি হেঁচকি ওঠে। শিশুর জিভের মধ্যে এক চিমটি পরিমাণ চিনি দিয়ে দিন। শিশু নিজেই খেয়ে নেবে। যদিও এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি তবে এটি মাঝে মাঝে বেশ কার্যকরী।

৪।শিশু যদি বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খায়, তাহলে হেঁচকি উঠলে শিশুকে নরম খাবার খেতে দিন। এক্ষেত্রে ভালো সমাধান হল আপেলের সস, রাইস সিরিয়াল, চটকানো কলা খাওয়ানো। 

৫।অনেক সময় শিশুর বেশি হেঁচকি উঠতে পারে,  তাহলে শিশুর খাওয়া বন্ধ করুন। এরপর শিশুকে  চিত করে শোয়ান এবং পিঠে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। এতে ধীরে ধীরে ডায়াফ্রাম এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

৬।শিশুকে তাড়াহুড়া করে খাওয়াতে গেলে হেঁচকি বেশি উঠতে পারে। এজন্য শিশুকে ধীরে ধীরে খাওয়ানো উচিত। তাছাড়া খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবেন না।

৭।হেঁচকি যদি নিয়মিত হয়, তাহলে ফার্মেসি থেকে Gripe Water এনে রাখতে পারেন। আদা, ইথার, ফেনল এবং আরো কিছু ক্যামিক্যালের মিশ্রণ হল Gripe Water। দুই ফোঁটা পানির সাথে Gripe Water মিশিয়ে শিশুকে ড্রপারে খাওয়ালে হেঁচকি ওঠা কমে যাবে।

৮।অনেক সময় অন্যদিকে শিশুর মনোযোগ সরিয়ে নিলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। যেমন, হেঁচকি উঠলে তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন। তাছাড়া ঝুনঝুনি জাতীয় কোন খেলনা  বা এমন কিছু এনে দেখান যা শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এতে হেঁচকি ওঠা অনেক ক্ষেত্রেই কমে যায়।

সুতরাং,এখন থেকে হেঁচকি ওঠলে মোটেই বিব্রত হতে হবে না।উপরিউক্ত উপায়গুলো যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে সহজেই হেঁচকি ওঠা বন্ধ করতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *